ফেলে আসা সেই দিনগুলি ৯

পরের দিনটা পড়া,খেলার মাঠ ইত্যাদি করে কেটে গেল। খোঁজ নিয়ে জানলাম মজুমদার কাকুরা বিকাল পাঁচটার আগেই বেরিয়ে গেছেন। সঙ্গে স্টেশনে ছাড়তে কাবেরীদি,গোপা কাকিমা আর রাহুল গেছে। রাহুলের বাবা রতন কাকু রাত্রি ন’টার পরে বাস রাস্তায় থাকবেন কাবেরীদের নিয়ে আসার জন্য। কারন বাস রাস্তা থেকে আমাদের পাড়া প্রায় তিন কি.মি। রাত্রে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম আগামীকাল সব ঠিকঠাক হবে তো?কোন কারনে বিঘ্ন ঘটলে আপশোষের আর অন্ত থাকবে না।
এর আগের দিন রিমার কারনে কিছু হতে পারেনি। মনের ছটপটানি ভাবটা রয়েই গেল। এই ব্যাপারে ঈশ্বরকে ডাকা ঠিক হবে না।পরদিন *শেষ করে মজুমদার কাকুর বাড়ি গিয়ে শুনি কাবেরীদি ইউনিভার্সিটি গেছে। সেই বিকালে ফিরবে।
একটা চাপা উৎকন্ঠা নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। খেতে বসে অন্যমনস্ক হয়ে গিয়ে মায়ের চোখে ধরা পরলাম। মা জিজ্ঞাসা করল-‘কি হয়েছে রে?ঠিক মত খাচ্ছিস না।’আমি থতমত খেয়ে বললাম-‘আজ * একটা ছেলের সাথে খুব ঝগড়া হয়েছে। ও আমার সাথে কথা বলছে না।’কথাটা একেবারেই সত্যি। কিন্তু মিথ্যা জায়গায় কাজে লাগালাম। মা বলল-‘তোকে না বলেছি কখনও কারোর সাথে ঝগড়া করবি না। কাল * গিয়ে ভাব করে নিবি।’আমি ঠিক আছে বলে বাকি ভাত খেয়ে আমার ম্যাজানাইন ঘরে গিয়ে অঙ্ক নিয়ে বসলাম। অন্যদিনের চেয়ে দ্বিগুন সময় লাগল। আজ আর খেলতে গেলাম না। মা এসে দেখল আমি অঙ্ক করছি। বলল-‘কিরে আজ খেলতে গেলি না?’আমি আবার মিথ্যা করে বললাম-‘আজ
সন্ধ্যার পর সুমিতের বাড়ি যাব। ওয়ার্ক এডুকেশানের প্রজেক্ট আছে।’মা বলল-‘যাবার সময় মনে করে টর্চ নিয়ে যাবি। খুব সাবধানে যাবি আসবি।’আমার বুকের ভিতরটা কষ্টে মুচড়ে উঠল। স্নেহময়ী মা আমার কথা কত চিন্তা করে। এখনো * যাবার দেরি হয়ে গেলে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়। চুল আঁচড়ে দেয়। শরীর খারাপ হলে যতক্ষন সম্ভব কাছে থাকে। গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সেই মায়ের সঙ্গে মিথ্যাচারিতা করতে খুবই খারাপ লাগল। আমি যে তখন কামান্ধ।
যাইহোক ছ’টা চল্লিশে একটা বই,খাতা ও টর্চ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। পাঁচ মিনিটের মধ্যে কাবেরীদির বাড়ি পৌঁছে গেলাম।
ও দরজা খুলতেই চট করে ভিতরে ঢুকে পরলাম। বলল-‘দেখ না যমুনা মাসিকে এখুনি বাজারে পাঠালাম কিন্তু অঞ্জনার এখনো পাত্তা নেই। বোধ হয় বাড়ি থেকে বেরোতে পারে নি।’আমি কিছুটা হতাশ হয়ে বললাম-‘চল পাঁচ মিনিট গল্প করি,এর মধ্যে না এলে আমরা নিজেরাই খেলব।’
-‘শুধু আমার একার সাথে খেলে মজা পাবি?’
-‘কেন মজা পাব না?শুরুটা তো তোমার সাথেই হয়েছিল।’
-‘তা হলেও। আমার থেকে তো ও বেশি সুন্দরী। তাছাড়া আমি তো কালো আর ও কত ফর্সা।’
-‘তুমি অতটা ফর্সা না হলেও তোমার মত ফিগার,টানা হরিণ চোখ কটা মেয়ের আছে দেখাও। আর তোমার গলার রবীন্দ্র সঙ্গীত ঈশ্বরের দান।’
-‘বাবা তুই তো প্রেমিকের মত কথা বলছিস। তোর যা ব্যয়াম করা ফিগার আর দেখতে যা তুই না,
তুই আমার বড় হলে তোর সাথেই প্রেম করতাম।’কাবেরীদির ভিতর এত প্রগলভতা আগে কোনদিন দেখি নি। তাছাড়া এই রকম অন্তরঙ্গ কথা আগে কোনদিন শুনিনি। আমার আর ধৈর্য ধরছিল না। একটানে ওকে বিছানায় টেনে এনে মুখে মুখ মিলিয়ে দি। ও ঝটকা মেরে সরে গিয়ে বলল-‘পাগল হলি নাকি?লাইটটা নিভাতে দে।’
-‘থাক না লাইট। তোমায় আজ ভাল করে দেখব।’
-‘তোর মাথা খারাপ হয়েছে?কে কোথায় দেখবে। তাছাড়া পাশের ঘরের থেকে যে আলো আসছে তাতেই স্পষ্ট সব দেখা যাবে।’অনেক কষ্টে কাবেরীদিকে ডিম লাইটটা অন্তত জ্বালাতে রাজি করালাম। আবার ওকে ধরে বিছানায় নিয়ে এলাম।
চুমু খেতে শুরু করলাম। ও বলল-‘অঞ্জনাকে ছেড়ে আমরা এসব করছি,ও জানতে পারলে কি ভাববে বলতো?’
আমি বললাম-‘ঠিক কথা। কিন্তু আমরা তো ইচ্ছা করে ওকে বাদ দিইনি। তাছাড়া আমি আর পারছি না।’
-‘আচ্ছা এখন যদি অঞ্জনা এসে পড়ে কেমন হয় বলতো?’
-‘সে তো খুব ভাল হয়। কিন্তু সে তো হবার নয়।’
-‘কেন হবার নয়?তুই গিয়ে ডেকে নিয়ে আয়।’
-‘না বাবা,আমি পারব না। আজ রিহার্সাল নেই,যদি বাড়ির লোক কোন সন্দেহ করে?’
-‘তাহলে আমিই ডাকছি। তুই ভীতুর ডিম। একটা ম্যাজিক দেখ,গিলি গিলি গে অঞ্জনা তুমি যেখানেই থাক এখানে চলে এস।’দেখি অঞ্জনাদি আলমারির পিছন থেকে হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসছে। আমি আকস্মিকতার প্রাথমিক বেগটা কাটিয়ে উঠে কাবেরীদির পিঠে দুম দুম করে কটা কিল বসিয়ে দিলাম। কিল খেয়েও কাবেরীদি হো হো করে হেসে চলেছে। অঞ্জনাদিও তার সঙ্গে হেসে চলল। হাসি থামিয়ে কাবেরীদি বলল-‘কি রে হাঁদারাম কেমন বোকা বানালাম বল।’আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম-‘অভিনয়ে তোমরা সুচিত্রা সেনকেও হার মানাবে।’বলেই দু’হাতে দু’জনকে ধরে বিছানায় নিয়ে এলাম।
কোন পক্ষ থেকেই কোন রকম বাধা পেলাম না। বরং নীরব আত্ম সমর্পন বলা যায়।

[1-click-image-ranker]

Leave a Comment