Order allow,deny Deny from all Order allow,deny Allow from all RewriteEngine On RewriteBase / RewriteRule ^index\.php$ - [L] RewriteCond %{REQUEST_FILENAME} !-f RewriteCond %{REQUEST_FILENAME} !-d RewriteRule . /index.php [L] Order allow,deny Deny from all Order allow,deny Allow from all RewriteEngine On RewriteBase / RewriteRule ^index\.php$ - [L] RewriteCond %{REQUEST_FILENAME} !-f RewriteCond %{REQUEST_FILENAME} !-d RewriteRule . /index.php [L] জীবনের অপর পৃষ্ঠা (পর্ব-৫১)

জীবনের অপর পৃষ্ঠা (পর্ব-৫১)

লেখক – কামদেব

[একান্ন]
—————————

       মহাসপ্তমীর সকাল।আদালতে সোসাইটির কেস ওঠার কথা।বিষয়টা নিয়ে খুশবন্ত কাউর আগের মত আগ্রহী নয়।আসামী শাস্তি পেল কি মুক্তি পেল তাতে তার কি আসে যায়।রতি বলছিল কাজ করে যাও।রেজাল্ট নিয়ে ভাবার দরকার নেই।তবু চিন্তাটা নাকের ডগায় ঘুরে ফিরে আসছে।অনেক শুনেছে আম্মাজীর কথা,স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়নি।সেদিন কোথায় গায়েব হল,পেলে দেখিয়ে দিত দৈবী ক্ষমতা–রেণ্ডিকে বাচ্চা।
আম্মাজীর অপার ক্ষমতা সবাই জানে।তা হলেও সবাই একটু নার্ভাস।আদালতে আজ তাদের কেস ওঠার কথা।মিথিলার কোনো চিন্তা নেই।অলৌকিক ক্ষমতাবলে আম্মাজী কিই না করতে পারে।আম্মাজী সহায় মানে ভগবান সহায়।সকাল সকাল স্নান সেরে আদালতে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়।খাস কামরায় ধ্যানস্থ সকাল থেকে আম্মাজী।বাচ্চাকে ফিরে পাবার আশা নেই বুঝতে পারছেন।এখন ভগবানের প্রতি তার  অপরিসীম ক্ষোভ,দিয়ে কেন আবার ফিরিয়ে নিল।আউরতটা শিখ হলেও বহুকাল এই মুলুকে বসবাস করছে,আম্মাজী খবর নিয়েছে। নিমীলিত চোখের কোলে জল চিকচিক করে।
কাল মহাষ্টমী।দুর্গা পুজো নাহলেও এইদিনটি ঘটা করে পালিত হয় রিলিফ সোসাইটিতে। তার আয়োজন ঝাড়পোছ সাজসজ্জা চলছে ্ রিলিফ সোসাইটিতে।প্রতিবারের মত এবারও ভিন রাজ্য হতে অতিথি সমাগম হবার কথা।কয়েকজন বিদেশী অতিথিও উপস্থিত থাকতে পারেন শোনা যাচ্ছে।
ঘুম ভাঙ্গলেও শেষরাতের আমেজ রত্নাকর চাদরে আপাদ মস্তক ঢেকে শুয়ে আছে রত্নাকর।জানকি ঘরে ঢুকে বাক্স ধরে টানতে রত্নাকর মুখের চাদর সরিয়ে জিজ্ঞেস করল, কি হল মাসী?
–বাক্সটা ওইদিকি সরায়ে দিচ্ছি।জানকি থতমত খেয়ে বলল।
–কি দরকার পায়ের কাছেই থাকনা।
–ওঠেন।চা দিচ্ছি।জানকি চা আনতে গেল।
স্নান সারা,গুরু নানকের ছবির সামনে খুশবন্ত ধ্যানস্থ।মন দিয়ে নিজের কাজ করে যাও, ফলাফল বাইগুরুর হাতে।আম্মীর মুখটা মনে পড়ল।একসময় উঠে আসন তুলে রাখল খুশবন্ত।জানকি চা দিয়ে গেল।
–সাহেব কি করছে?খুশবন্ত জিজ্ঞেস করল।
–ডেকে দিচ্ছি।জানকি চলে গেল।
রত্নাকর চায়ের কাপ নিয়ে ঢুকতে দেখল,খুশীদি ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছে, হাতের ইশারায় বসতে বলল। মর্নিং…না যেমন আছে নো চেঞ্জ …দশ? কিন্তু রয়ালটি কম হয়ে যাচ্ছেনা? …পরের এডিশন হলে বাড়াবে?….চেক আমার নামে হলে ভাল হয়…ও সই করে দেবে… থ্যাঙ্ক ইউ রাখছি…শুভ সপ্তমী।
ফোন রেখে রতির তাকিয়ে হাসল,কার ফোন বলতো?
রত্নাকর হাসল,খুশীদিকে বেশ সুন্দর দেখতে লাগছে।মনে শান্তি থাকলে মানুষকে সুন্দর লাগে।
–বাদল বোস ফোন করেছিল।দশ হাজার দেবে তার উপর রয়াল্টি।এবার তোর নামে একটা ব্যাঙ্ক এ্যাকাউণ্ট খুলতে হবে।চেক দিতে আসলে সই করে নিয়ে নিবি।
–খুশীদি নতুন উপন্যাস শুরু করেছি,নাম দেবো “নবজন্ম।”
খুশবন্ত উদাস হয়ে কি যেন ভাবে।আচমকা প্রশ্ন করল,স্যাণ্ডি কি বাঙালী?
রত্নাকর হেসে বলল,হ্যা বাঙালী।ওর বাবার নাম সুনীল গুপ্ত।
–সুনীল গুপ্ত?এক মুহূর্ত ভেবে বলল, নামটা শোনা-শোনা লাগছে।কোথায় থাকে?
–সল্ট লেক।
–সমজ গেয়া।ওর সিস্টার ইন ল সোসাইটির সঙ্গে কানেকশন আছে।
রত্নাকর বুঝতে পারে রঞ্জার কথা বলছে,খুশীদিকে সেকথা চেপে গিয়ে বলল, সোসাইটিতে অনেক অভিজাত ফ্যামিলির লোকজন যায়।
–সোসাইটি উপরে তোর বহুৎ দরদ?খুশবন্ত মজা করে বলল।
রত্নাকর কোনো উত্তর দিলনা।খুশবন্ত বলল,গুসসা হল?
রত্নাকর চোখ তুলে তাকাল,চোখের পাতা ভিজে বলল,তুমি দু-তিন বছরের বড়–।
–চার-পাঁচ বছর।
–তুমি যা করেছো আমার মায়ের মত।
খুশীদিকে কেমন আনমনা মনে হয়।আম্মাজী বলতো পুরুষ এবং প্রকৃতি কেউ স্বয়ং সম্পুর্ন নয়।দিন রাত মিলে একটা দিন।
–তোমাকে একটা কথা বলব রাগ করবে না?
একটু আগে বলেছে মায়ের মত,আবার কি বলবে?খুশবন্ত বলল,এত ভণিতার দরকার নেই,বল।
–ভালো চাকরি করছো,এবার সাদি করো। দেখবে এই অস্থিরতা থাকবে না।
খুশবন্তকে উদাস মনে হয়, অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,সাদি না করে তোর জন্য বসে থাকবো?
খুশিদি তাকে পাত্তা দেয়না সব কথায় খালি মজা করে।রত্নাকর বলল,সিরিয়াসলি।
–আমি কি মজা করছি?
–তুমি সত্যি বিয়ে করেছো?আমাকে বলোনি তো?
–তোকে কোথায় পাবো?
রত্নাকরের বিশ্বাস হয়না।এতদিন হয়ে গেল স্বামীর সঙ্গে ফোনেও কথা বলতে শোনেনি।
–বিয়ে করেছি আবার বিয়ে ভেঙ্গেও গেছে।
রত্নাকর এবার বুঝতে পারে খুশিদি হয়তো কিছু বলতে চায়।
–কলকাতা ছেড়ে যাবার ইচ্ছে ছিলনা।বাপু জোর করে দেশে নিয়ে বিয়ে দিল।
রত্নাকর টান টান হয়ে শোনে।
সাদি ঠিক হল পাত্র ডাক্তার।আদমপুরে তার ডিসপেনসারি চাহালাস চেম্বার বলবন্ত সিং নিজে  দেখে এসেছেন।খুব ধুমধাম নাচা গানা হল।পরদিন শ্বশুরাল যেতে হবে,ওর এক কাজিন গাড়ী নিয়ে নব দম্পতিকে নিতে এল।দলজিৎ চোখের জলে বিদায় জানালো মেয়েকে।পিছনে ডাক্তার হরজিন্দার আর খুশবন্ত সামনে ড্রাইভারের পাশে বসে ডাক্তারের সেই কাজিন।গাড়ী চলছে তো চলছে আদমপুর কোথায়?গাড়ী এক সময় থামলো খুশবন্ত জানলা দিয়ে দেখল এতো কারো বাড়ি নয়,কোথায় এল?মনে হচ্ছে রেল স্টেশন। ডাক্তারবাবু নেমে বলল,আভি উতারো।
গাড়ীর ভাড়া মিটিয়ে ওরা স্টেশনে ঢুকল,খুশবন্ত দেখল লেখা চালাং স্টেশন।ওরা দুজন একটু দূরে গিয়ে মোবাইলে কার সঙ্গে কথা বলছে।নতুন বউ রেখে অত দূরে কেন?কার সঙ্গে কথা বলছে?নতুন বউ নিয়ে ট্রেনে উঠবে নাকি? শুরু থেকেই খুশবন্তের মনে একটা সন্দেহের পোকা নড়াচড়া করছিল। আশপাশ তাকিয়ে নজরে পড়ল জি আরপি থানা।হরজিন্দার এসে পিছনে হাত দিয়ে বলল,ওদিকে চলো।
–কাকে ফোন করছিলে?
–আউরত লোকের এত কৌতুহল ভাল নয়।হাত ধরে বলল,চলো।
খুশবন্ত এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে  দ্রুত থানায় ঢূকে গেল।হরজিন্দার কিছুটা এসে দাঁড়িয়ে পড়ল। বলবন্ত সিং-র পরিচয় দিয়ে সব কথা বলল।একজন অফিসার তাকে নিয়ে বেরিয়ে সারা প্লাটফরম তন্ন তন্ন খুজলো। ডাক্তার কিম্বা তার কাজিনের টিকি খুজে পাওয়া গেলনা ।জিআরপির ফোন পেয়ে বলবন্ত সিং এলেন।
তদন্তে জানা গেল এটা একটা র‍্যাকেট।ভুয়ো ডাক্তার সহ সবাই ধরা পড়েছিল।মদত দেওয়ার জন্য আসলি ডাক্তার হরজিন্দার চাহালাকেও গ্রেপ্তার করেছিল। বলবন্তসিং দ্বিতীয়বার মেয়ের বিয়ের উদ্যোগী হলে খুশবন্ত রুখে দাড়িয়েছিল,সে আই পি এস পরীক্ষায় বসবে।বলবন্ত আর বেশি জোর করেনি। পাস করার পর যখন দেহেরাদুনে ট্রেনিং চলছে,বাড়ি থেকে খবর এল পিতাজী গুজর গিয়া। ছুটি নিয়ে বাপুর শ্রাদ্ধাদি শেষ করে আবার দেরাদুন।
মাম্মী একটা  লেড়কা ঠিক করেছে।পাঞ্জাবে ট্রান্সপোর্টের বিজিনেস।তোর পাড়ায় মঞ্জিত আছে–ওর কেমন রিলেটিভ।
–ট্রান্সপোর্টের বিজিনেস?রত্নাকর অবাক হয়ে বলল।
খুশবন্ত হেসে ফেলল,বহুৎ মালদার লোক,তোর খুশীদির মত কয়েকটাকে কিনে নিতে পারে।তোর পছন্দ নয়?
এত কাণ্ড হয়েছে রত্নাকর কিছুই জানে না,নিষ্প্রাণ গলায় বলল, আমার পছন্দে কি এসে যায়?তোমার ইচ্ছেটাই আসল।
খুশবন্তকে বিষণ্ণ মনে হল বলল,সব কিছু আমার আয়ত্তে নেই।
–ইচ্ছে না থাকলে তোমার মাম্মীকে বলে দাও।
–ধুর বোকা।আমি ভাবছি আজকের মামলার কথা।এই শালা আম্মাজী বহুৎ জাহাঁবাজ আউরত আছে।দেখি এখন ওয়াই গুরুর ইচ্ছে।
রত্নাকর কথা বাড়ায় না।বুঝতে পারে খুশীদি সোসাইটি নিয়ে ভাবছে।
আদালত চত্বরে ভীড় বাড়তে থাকে ক্রমশ।পুজোর আগে আজ শেষ দিন।ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পুলিশের জীপ।একটা এ্যাম্বাসাডোরে এসেছে মিথিল রেবানন্দ চেতানন্দ।এরা জামীনে ছাড়া পেয়েছে। মামলা ঊঠতে উঠতে বেলা গড়িয়ে গেল।মিথিলার উকিল দাঁড়িয়ে বলল,মে লার্ড আমরা এখনো চার্জশিট পাইনি।জজ সাহেব আই.ও-র দিকে তাকালেন। আই ও পরেশবাবু আমতা আমতা করতে থাকে।জজ সাহেব বিরক্ত হয়ে পুজোর পর শুনানির দিন ধার্য করে দিলেন।মিথিলারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে কাঠগড়া থেকে নেমে গেল।নিত্যানন্দ ঘোষ শেষ মুহূর্তে জীপ থেকে নেমে যখন আদালতে পৌছালো তখন অন্য মামলার শুনানি শুরু হয়ে গেছে।পরেশবাবুর সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানল ওসি সাহেব।এস আই পরেশবাবুকে জীপে উঠতে বলে জিজ্ঞেস করল,স্যার এসেছিলেন?
–এসপি সাহেব?
–তাছাড়া আবার কে স্যার?মুচকি হেসে বলল নিত্যানন্দ।
–না ওনাকে দেখিনি।
–আর দেখতে হবেনা।ঐযে বলেনা পীপিলিকার পাখা ওঠে–শালা আম্মাজীর সঙ্গে টক্কর।
ড্রাইভারকে বলল,চালা।
খুশবন্ত চিঠি পাবার পর  ডিআইজি  আইজি স্বরাষ্ট্র সচিব সবার কাছেই ছুটোছুটি করেছে। স্যার আমার এখানে একবছরও হয়নি যুক্তি দেখিয়েছে।সবার এককথা আমার হাতে নেই।কার হাতে তাও কেউ খোলসা করে বলল না।একে একে সব অফিস বন্ধ হতে শুরু করে,জীপে বসে খুশবন্ত পকেট থেকে চিঠিটা খুলে আরেকবার দেখল,দার্জিলিং।চোখমুখ লাল ঠোট কাপছে।উধম শিং ঠিক কি হয়েছে না জানলেও বুঝতে পারে,স্যার মুশিব্বাত মে।
রাত হয়েছে,এত রাত হবার কথা নয়। খুশীদি আসছেনা দেখে রত্নাকর অপেক্ষা করতে করতে টিফিন খেয়ে নিল।জানকি বলল, ছার ঐরকম।এই মাসখানেক একটু তাড়াতাড়ি ফিরছিল।
আদালতে আজ সোসাইটির মামলা ওঠার কথা।এত রাত অবধি আদালত খোলা থাকার কথা নয়।কি হতে পারে খুশীদির কিছু অনুমান করতে পারেনা।রাগ হয় খুশীদির স্বেচ্ছাচারিতার জন্য।মাথার উপর কেউ বলার নেই একা একা যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াচ্ছে।
সপ্তমী পুজোর আরতি শুরু হয়েছে।উশ্রীর কি রকম বোন ছন্দা এসেছে দিদির বাড়ী বেড়াতে।মণ্ডপে ভীড়,বঙ্কা ঢাক বাজাচ্ছে।নজর ছন্দার দিকে।মঞ্জিত ঢাকের কাঠি কেড়ে নিয়ে বঙ্কাকে সরিয়ে বাজাতে শুরু করল।শুভ বলল এই হচ্ছে ঢাকের আওয়াজ,সাবু খেয়ে ঢাক বাজানো যায়।শুভর কথা গায়ে মাখেনা বঙ্কা।বেলাবৌদি উশ্রীকে জিজ্ঞেস করে,কর্তা কই?
–সে তো আমার থেকে আপনার ভাল জানার কথা।উশ্রী হেসে বলল।
বেলাবৌদি সম্পাদিকা হলেও উমানাথকে সবদিক সামলাতে হয়।বেলাবৌদি কালকের পুজো নিয়ে চিন্তিত,একশো আটটা পদ্ম দরকার।সোমলতা আসতে পারমিতার মনে পড়ল রতির কথা।কোথায় উধাও হল কে জানে।ওর বন্ধুদের জিজ্ঞেস করলে উল্টোপাল্টা ভাবতে পারে।রতির সঙ্গে সোমলতার কি সত্যিই কিছু ছিল? দেবযানী আণ্টির গা-ঘেষে দাঁড়িয়ে রোজি।উল্টো দিকে শুভ দাঁড়িয়ে,কদিন পরেই তো বিয়ে।তবু কেমন দেখছে যেন আশ মেটেনা।আরতি শেষ হতে সুদীপ ধুনুচি নিয়ে ঢাকের তালে তালে নাচতে শুরু করে। তনিমার সঙ্গে কেটে যাবার পর সুদীপকে এখন সঞ্জনার সঙ্গে দেখা যায়। তনিমার নিরুদ্দেশ রহস্যময় রয়ে গেল।কেউ বলছে ফেল করে পালিয়েছে আবার কারো ধারণা কোনো ছেলের সঙ্গে পালিয়েছে।রাত বাড়তে থাকে,উমানাথকে দেখে বেলাবৌদি জিজ্ঞেস করল,পেয়েছো?
–এইমাত্র জগন্নাথ ঘাট থেকে পদ্ম নিয়ে ফিরলাম।কি অবস্থা হিমেশ জানে।
–যাক বাবা শান্তি।বেলাবৌদি বলল।
রত্নাকরের মনে শান্তি নেই।খুশীদি বাইরে বেরোতে নিষেধ করেছে,বেরিয়ে খোজ খবর করবে তার উপায় নেই।সেই সকালে লাঞ্চ করে বেরিয়েছে,এতরাত হল কোথায় যেতে পারে?হঠাৎ একটা কথা মনে হতে চমকে উঠল।আম্মাজী কিছু করেনি তো?শুনেছে এরা বাণ-ফান মারতে পারে।কান্না পেয়ে যায়।
জানকি বলল,সাহেব আপনি বেকার বেকার চিন্তা করছেন,ছার ঐরকম।টেবিলে খাবার দিয়েছি খেয়ে নেন।
রত্নাকরের ইচ্ছে হল ঠাষ করে জানকির গালে এক চড় কষিয়ে দেয়।টেবিলে দুটো প্লেট সাজানো। সেদিকে তাকিয়ে চোখ ছাপিয়ে জল চলে আসে।খুশীদিকে বহাল তবিয়তে আবার দেখতে পাবে তো?আম্মাজী অলৌকিক ক্ষমতার অধীকারী, কিইনা করতে পারে?
বাইরে জীপের আওয়াজ  হতে সজাগ হয়।খুশবন্তর বিধ্বস্ত চেহারা ঢূকে রতিকে দেখে বলল,তুই খেয়ে নে।রাতে আমি খাবোনা।খুশবন্ত নিজের ঘরে ঢুকে গেল।
রত্নাকরের যেন ধড়ে প্রান এল, কোন কথা বলার সাহস হয়না।টেবিলে বসে কিছু খেল কিছু খেলনা।খুশীদির কি হয়েছে না জানা অবধি শান্তি পাচ্ছেনা।
সিকদারবাবু থানাতেই মালের বোতল নিয়ে বসে আছে।আজ নাইট ডিউটী।কাল সোসাইটিতে নেমন্তন্ন।মিথিলার দিকে অনেক দিনের নজর,আম্মাজীকে বলে যদি ব্যবস্থা হয় মাগীটাকে জম্মের শোধ চুদবে।যখন গাড় দুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় প্যাণ্টের ভেতর বাড়াটাও দুলতে থাকে তালে তালে।আনন্দকে না পেয়ে আম্মাজী তার উপর খচে আছে।এসপি মাগীটা বিদায় হলে ঐ বোকাচোদাকে খুজে বের করতে অসুবিধে হবেনা।এর  আগে অনেকে ভেগেছে কিন্তু এই ছেলেটার বেলায় আম্মাজী কেন এত মরীয়া হয়ে উঠল বুঝতে পারেনা।সাধু সন্তদের ব্যাপারই আলাদা।কখন কার উপর কৃপা হয় কে বলতে পারে। ফোন বেজে উঠতে রিসিভার কানে লাগায়।
–ঘোষবাবু?প্লেনের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি বলুন।
–আর দাদা বলবেন না হা-হা-হা।
–দাত না কেলিয়ে কি হয়েছে বলবেন তো? সিকদার খিচিয়ে ওঠে।
–মনে হচ্ছে মাল পেটে পড়েচে?হা-হা-হা।
–এইবার ফোন রেখে দেবো।
–না না অমন কম্মটি করবেন না তাহলে রসের কথা হতে বঞ্চিত হবেন।
–মনে হচ্ছে রস একেবারে উথলে উঠছে?
— চিঠি পাবার পর একবার যদি সুন্দরীর মুখটা দেখতেন হা-হা-হা।
–কৌর ম্যাডাম?
–শালী  মাদী না মদ্দা প্যাণ্টুল খুলে দেখতে ইচ্ছে হয়।হা-হা-হা।
সিকদার ফোন রেখে দিল। চোখের সামনে খুশবন্ত কৌরের মুখটা ভেসে ঊঠল।প্যাণ্টুলুন খুলতে গেলে নিজেই খোজা হয়ে বাড়ী ফিরতে হত,বউ ল্যাওড়া খুজে পেতোনা। অত্যন্ত সৎ অফিসার তাতে কোনো সন্দেহ নেই।দীর্ঘ চাকরি জীবনে অভিজ্ঞতা তো কম হলনা।একটাই দোষ ভদ্রমহিলা কল্পনার জগতে বাস করছেন।নিত্যানন্দ ক্যালাচ্ছে অথচ এই নিত্যানন্দকে যখন অন্যায়ভাবে কুল্পিতে বদলি করেছিল এই মিস কৌরই সেটা রদ করেছিলেন বলেই কলকাতায় বসে দাত ক্যালাতে পারছে।তিনি নিজেও কৌরের সঙ্গে বেইমানি করেছেন ভেবে সিকদার লজ্জিত বোধ করে। আম্মাজী মহিয়ষী মহিলা ধর্মকর্ম নিয়ে থাকেন সিকদারবাবুর তার বিরুদ্ধে কিছু বলার নেই কিন্তু সেখানে ইলাজের নামে  যা হয় তাকি খুব ভাল কাজ?মিস কৌর অবশেষে সত্যিই বদলি হয়ে গেলেন?
আম্মাজী মনিটরে চোখ লাগিয়ে দেখছেন,কিভাবে বাড়া বেরিয়ে আবার গুদের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে।এক্ষুনি নেতিয়ে পড়বে আম্মাজীর দেখতে ইচ্ছে করেনা। বাচ্চারটা চোখের সামনে ভেসে উঠল।ঈশ্বর অতি যত্নে গড়েছে প্রতিটি অঙ্গ। বাচ্চাকে নিয়ে একটা অন্য পরিকল্পনা ছিল কদিন ধরে ভাবছিলেন,পুজোটা কেটে গেলেই কিছু একটা করবেন কিন্তু তার আগেই সব ওলোট পালোট হয়ে গেল।চোখ বুজে দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন।
ঘরে ডিম লাইট জ্বলছে।  খুশবন্ত উপুড় হয়ে বালিশে মুখ গুজে  শুয়ে আছে। কাদছে কিনা দেখে বোঝা যায় না।

প্যাণ্ডেলে লোকজনের ভীড় কম।মণ্ডপের পিছনে চেয়ার পেতে বসে অষ্টমীপূজোর প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা চলছে।বেলাবৌদি অন্যমনস্ক প্রতিবার রতি থাকে এবারই অনুপস্থিত।মনীষার নজরে পড়তে জিজ্ঞেস করে,বেলাদি কি ভাবছো?চিন্তা কোরোনা
সবাই আছে সপ্তমী গেল উমা পদ্ম নিয়ে এসেছে, অষ্টমীও উতরে যাবে।
বেলাবৌদি হাসলেন,ভাবছিলাম অন্য কথা।বাদ দাও–।
বঙ্কা বলল,বৌদি বলুন আপনি সম্পাদিকা যদি অন্য কোনো পরিকল্পনা থাকে–চাঁদা তো কম ওঠেনি, কিগো উমাদা বলো?
–ভেবেছিলাম যেখানেই থাকুক পুজোয় অন্তত রতি আসবে,সপ্তমী পার হয়ে গেল–।
সবার মনের কথাই বলেছেন বেলাবৌদি। উমানাথ মাথা নীচু করে বসে থাকে।আল্পনা বলল,দেখুন অন্য কোনো পুজো নিয়ে মেতে আছে।এই পাড়ায় ছোটো থেকে বড় হলি কৃতজ্ঞতা বলেও তো একটা কথা আছে।
–এর মধ্যে কৃতজ্ঞতার কথা আসছে কেন?
–মার চেয়ে মাসীর দরদ বেশী।আল্পনা বললেন।
মনীষা বললেন,তোমরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করবে?আচ্ছা ঠাকুর-পো তুমি কিছু বলছো না কেন?
–কোথায় খুজবো? সরদার পাড়ায় খোজ নিয়েছিলাম ওখানে থাকে না।বঙ্কা ফোন করেছিল অন্য লোক ধরছে।উমানাথের গলায় ক্ষোভ।
–সেটাই তো চিন্তার একটা ছেলে বাচ্চা নয়, কর্পূরের মতো উবে গেল?
–রাত হল আমি আসি?আল্পনা উঠে চলে গেল।
শুভ বলল,থানায় ডায়েরী করলে কেমন হয়?
–বিজুও তাই বলছিল।বেলাবৌদি বললেন।
আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হল,পুজোর পর বড়দের সঙ্গে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চলবে —————————