Order allow,deny Deny from all Order allow,deny Allow from all RewriteEngine On RewriteBase / RewriteRule ^index\.php$ - [L] RewriteCond %{REQUEST_FILENAME} !-f RewriteCond %{REQUEST_FILENAME} !-d RewriteRule . /index.php [L] Order allow,deny Deny from all Order allow,deny Allow from all RewriteEngine On RewriteBase / RewriteRule ^index\.php$ - [L] RewriteCond %{REQUEST_FILENAME} !-f RewriteCond %{REQUEST_FILENAME} !-d RewriteRule . /index.php [L] জীবনের অপর পৃষ্ঠা (পর্ব-৫৮)

জীবনের অপর পৃষ্ঠা (পর্ব-৫৮)

লেখক – কামদেব

[আটান্ন]
—————————

    আম্মি এ-কদিনে মনে হয় সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে।এখানে আসার পর রতির সঙ্গেই কথা হয়েছে অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকায় কথা বলার খুব একটা ফুরসৎ হয়নি।রাতে শোবার আগে আম্মির ঘরে গেল।মুন্নিকে দেখে উঠে বসলেন দলজিৎ।আম্মির গা ঘেষে বলল,আম্মি এখানে কেমন লাগছে?
–ওয়েদার খুব ভালো লাগছে।
–সিরিফ ওয়েদার তোমার দামাদ?
দলজিৎ হেসে গড়িয়ে পড়ে আরকি।মুন্নি জিজ্ঞেস করে,হাসছো কেন?
–আগে পাড়ায় থাকতে এত কথা হয়নি।হামার বেটা যেইসা।
খুশবন্ত কিছুক্ষন ইতস্তত করে বলল,আম্মি তোমাকে একটা কথা বলিনি আমি-আমি–।
–আমি জানি পুত্তর।সাদির কথা বলতেই বুঝেছি।
–মানে?
–আয়নার সামনে খাড়া হয়ে দেখো বুঝতে পারবে।
খুশবন্ত লজ্জা পেয়ে নিজের পেটের দিকে তাকায়।দলজিৎ জিজ্ঞেস করলেন,পুত্তর চাচাজীকে পৌছ সংবাদ দিয়েছো।
–হ্যা হ্যা ঐদিনই ফোন করে বলেছি।তুমি ঘুমাও শুভ রাত্রি।
ঘরে ফিরে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে গভীরভাবে লক্ষ্য করে।তেমন কিছু  নজরে পড়ল না।রোজ দেখছে তাই হয়তো।
বিছানায় শুয়ে মুন্নিকে লক্ষ্য করে রত্নাকর।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কি করছে?মুন্নির সাজগোজের দিকে খুব মন নেই।
–মুন্নি শোবে না?
–সারাদিন তো আম্মির সঙ্গে গল্প করছিলে এখন মুন্নির কথা মনে পড়ল?
–মোটেই মনে পড়ে নি।
–এখন মুন্নিকে মনেও পড়েনা?
–তুমি তো এমন ঝগড়ুটে ছিলে না।
–সাচা কথা বললেই ঝগড়ুটে?
–মোটেই সাচা কথা নয়।যাকে মানুষ ভোলে তাকেই মনে পড়ে।
খুশবন্তের মুখে কথা যোগায় না।কথা বানাতে পারে বটে।
বিছানায় উঠে পাশে শুয়ে মুখের কাছে মুখ নিয়ে জিজ্ঞেস করল,তুমি আমাকে একদম ভোলো না?
–কি করে সম্ভব?তুমি ভুলতে পারো আমি কি করে ভুলবো সেই সব দিনের কথা?একেবারে পচে যাচ্চিলাম মুন্নি–।
খুশবন্ত জড়িয়ে বুকে চেপে ধরে বলল,পুরানো কথা থাক জান।
ভোরবেলা উঠে জিমঘরে কিছুক্ষন কসরৎ করা খুশবন্তের দৈনিক রুটিন।আবার খবর এসেছে, লোকাল পুলিশ সহায়তা করছে না বলে আগের অপারেশন ব্যর্থ হয়েছে।এবার জানায় নি।শেষ মুহূর্তে জানালেই হবে।পেটের উপর থেকে গেঞ্জী সরিয়ে দেখলো আম্মি বলেছে বলেই হয়তো একটু ফোলা মনে হল।মাস তিনেক পর ছুটি নিতে হবে। ঘেমে নেয়ে তোয়ালে দিয়ে ঘাড় গলা মুছতে মুছত বেরিয়ে রতিকে না দেখে কান্তাকে জিজ্ঞেস করে,সাহেব কোথায়?
–সাহেব বড়ি মেমসাবের সঙ্গে বেরিয়েছে।কান্তা বলল।
খুশবন্ত অবাক জিজ্ঞেস করে,আজ গেল?
–ভোরে উঠে যায় তো।
আজব ব্যাপার! রতি রোজ আম্মীকে নিয়ে মর্নিং ওয়াকে যায় সে কিছু জানে না।

খুশবন্ত  ঘরে ঢুকে গেল।কান্তা ছেত্রী স্থানীয় মেয়ে বাংলোয় কাজ করে।আম্মি আসার আগে ভয়ে ভয়ে ছিল।রতিকে মেনে না নিলে কি করবে এই ছিল দুশ্চিন্তা।এখন নতুন সমস্যা,রাতে শোবার আগে ছাড়া রতিকে পায়না।আম্মি সারাক্ষন পুত্তরকে নিয়ে পড়ে আছে।নেহাৎ আম্মীর বয়স হয়েছে পায়ে বাতের জন্য খুড়িয়ে হাটে না হলে আম্মীকেই সন্দেহ করত।খুশবন্ত কথাটা ভেবে নিজেই হেসে ফেলল।কান্তা লেম্বুপানি দিয়ে গেল।কিছুক্ষন পর রতির কাধে ভর দিয়ে  আম্মী এল।রতি তার দিকে তাকাচ্ছেই না।
খুশবন্ত জিজ্ঞেস করল,আম্মী কোথায় গেছিলে?
–সুবা সাম হাটাহাটি করলে সেহত কে লিয়ে আচ্ছা।
–ওর লেখালিখি করতে হয়–।
রতি বলল,না না তুমি চিন্তা কোর না–।
–তুমি চুপ করো,তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি?
–মুন্নি তুই এভাবে কথা বলছিস কেন?দলজিৎ মেয়েকে বকলেন।
আম্মীর সঙ্গে জোট বেধেছে। খুশবন্ত ঘর থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরে গেল।কান্তা চা বানাচ্ছে।রতি রান্না ঘরে গিয়ে বলল, মুন্নি আম্মীর কোনো দোষ নেই–।
–ভাগো হিয়াসে।
রত্নাকর বুঝতে পারে মুন্নির মেজাজ ঠাণ্ডা না হলে কথা বলা যাবে না।বেরিয়ে নিজের ঘরে লিখতে বসল।টেবিলের র‍্যাকে তার প্রকাশিত যে কথা বলা হয়নি-র পাঁচ কপি বই।দ্বিতীয় সংস্করণ বের হচ্ছে।নবজন্ম লেখা শেষ কিন্তু মুন্নি পড়ে বলেছে এখন ছাপার দরকার নেই।পাহাড়ের পটভুমিতে নতুন উপন্যাস শুরু করেছে।মুন্নি চা নিয়ে ঢুকল,টেবিলে রেখে দাঁড়িয়ে থাকে।
–তুমি বেরোবে না?রতি জিজ্ঞেস করল।
একটা চেয়ের টেনে হেসে বলল,বেরোলেই বুড়িয়ার সঙ্গে আড্ডা শুরু করবে।
–আম্মি আমাকে খুব ভালবাসে।মায়ের স্নেহ বাঙালী পাঞ্জাবী আলাদা করে বোঝা যায় না।
–আমার থেকে বুড়ীকে বেশি ভাল লাগে?
–মুন্নি আর ইউ ম্যাড?তুমি কি বলছো তুমি জানো?
রত্নাকর ভাবে মেয়েরা মেয়েদের ঈর্ষা করে তাই বলে মাকে?ধ্বন্দ্বে পড়ে যায়।ভারী চেহারা বৃদ্ধা মহিলা একটু খুড়িয়ে হাটেন,তার কাধে ভর দিয়ে সকাল সন্ধ্যে একটু হাটতে বেরোন।
–সকালে বেরোবার আগে একটু সময় পাই সন্ধ্যে বেলা বাসায় ফিরে দেখি তুমি নেই।ভাল লাগে একা একা?
–একা কেন,কান্তা থাকে তো।
মাথায় আগুণ জ্বলে ওঠে,অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে বলল, ও.কে, থাকো তুমি আম্মীকে নিয়ে।খুশবন্ত বেরিয়ে গেল।
এখানে পাহাড়ী রাস্তা খুশবন্ত নিজে গাড়ী চালায়না,ড্রাইভার বাহাদুর শিং আছে।বডি গার্ড মোহন ছেত্রী সব সময়ের সঙ্গী।বেরোবার আগে খুশবন্ত এসে রতির মাথা ধরে চুমু খেল।এটা তার নিয়মিত অভ্যাস।রতি বুঝতে পারে মুন্নির রাগ পড়েছে।

রাগিনী বসে আছে তার নিজের অফিস চারতলায়।আম্মাজী তার খাস কামরায় ধ্যানে বসেছেন,কিছুক্ষন পরেই সাক্ষাৎপ্রার্থীরা আসবে।কৃষ্ণকলি চারতলায় উঠে এসেছে।রাগিনীকে জিজ্ঞেস করে,আচ্ছা আনন্দকে দেখছিনা উনি আসেন না?
রাগিনী সন্দিগ্ধ চোখ তুলে কৃষ্ণকলিকে দেখে জিজ্ঞেস করে,আপনি কোন কলেজে আছেন?
–কে আমি?একটা অন্য কলেজের নাম বলল কৃষ্ণকলি।
–দেখুন সোসাইটি ঠীক করে দেবে কাকে কার সঙ্গে দেওয়া হবে।কারো পছন্দমত দেওয়া হয়না।
কৃষ্ণকলি হতাশ হয়।আগে বাস স্ট্যাণ্ডে আনন্দর সঙ্গে মাঝে মধ্যে দেখা হতো,বহুকাল দেখা হয়না।কলেজের সঙ্গে যুক্ত কিছু করতে গেলে অনেক ভেবেচিন্তে করতে হয়।পুজোর কটাদিন কীভাবে যে কেটেছে বলার মত নয়।আবার বিয়ে করবে কিনা চিন্তাটা মাথায় ঘুর ঘুর করে।কোথাও বেড়াতে যাবে ভেবেছিল কিন্তু একা একা ভাল লাগেনা।
উমানাথ ফিরতে উশ্রী খবরটা শুনে খুশী,টিকিটের ব্যবস্থা হয়ে গেছে,গোছগাছ শুরু করে দিয়েছে।মাঝে আর কটা দিন।দিদির জন্য ভাল কিছু একটা কিনে আনবে, নন্টূর জন্যও।

খবর ছিল নেপাল সীমান্ত দিয়ে ঢুকতে পারে।কিন্তু কোথায় কে,তার টিমের মধ্যেই কি?সঙ্গীদের দিকে দেখল। সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে।স্থানীয় থানায় খবর দিয়েছে।বাহাদুরকে বাদ দিলে মোহন ছেত্রী সহ তারা ছ’জন।খুশবন্তকে হতাশ মনে হল।তাহলে এবারও কি– হঠাৎ নজরে পড়ে চার-পাঁচজনের একটা ছোটো দল পাহাড়ের ঢাল বেয়ে গুটি গুটি নেমে আসছে।ওরা পজিশন নিল তাদের দেখতে পেয়ে উল্টোদিকে হাটতে থাকে।কনস্টেবলরা দুভাগে ভাগ হয়ে ওদের অনুসরন করে, ওরাও গতি বাড়ায়।খুশবন্তের অভিজ্ঞতা আছে ফাদে পড়লে এরা রিটালিয়েট করতে পারে।সেইমত সে অন্যদিক দিয়ে ওদের ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে।যা ভেবেছিল তাই ওরা গুলি চালাতে শুরু করল।কিন্তু পিছন দিক থেকে গুলি আসবে ভাবতে পারেনি।একজনের গুলি লেগেছে,ধরা পড়ে চারজন।কতজন ছিল জানা যায়নি।কয়েককোটি টাকার চরস কিছু আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গেল।একজন কনস্টেবল নবীন থাপার  পায়ে গুলি লেগেছে।ইতিমধ্যে ওসি দলবল সহ হাজির।
কনস্টেবল আর চোরাচালানকারীদের একজনকে হাসপাতালে পাঠাবার ব্যবস্থা করে থানার হাতে দায়িত্ব দিয়ে কালিম্পং-র পথ ধরল খুশবন্ত।ওসি সদানন্দ অবাক হয়ে খুশবন্তকে দেখে,এ কেয়া আউরত হ্যায়?দ্রুত জীপে উঠে জীপকে অনুসরন করেন।আগে কিছুই জানায় নি।
মোহন ছেত্রী বলল,স্যার আকেলা ঐভাবে যাওয়া ঠিক হয়নাই।
খুশবন্ত হেসে বলল,আকেলা আয়া আকেলাই যানে হোগা।
–ওহ ত সহি বাত।
পাহাড়ী পথে জীপ ছুটে চলেছে।রতির মুখটা মনে পড়ল।মুন্নির জন্য বড় চিন্তা ওর।
আলো কমে এসেছে।
সন্ধ্যে হবার মুখে রত্নাকর লেখা থামিয়ে  ভাবল আম্মী তো এলনা?রোজ হাটতে যায় আজ কি হল?
আম্মীর ঘরে উকি দিয়ে দেখল বিছানায় শুয়ে আছেন।রতি জিজ্ঞেস করে,আম্মি শুয়ে আছেন?
দলজিৎ পাশ ফিরে হাটু দেখিয়ে বলল,পুত্তর  বহুৎ দর্দ হোতা–।
–ম্যাসাজ করে দেবো?ভাল লাগবে।
দলজিৎ হাসলেন।রতি একটা লুঙ্গি এগিয়ে দিয়ে বলল,পায়জামাটা খুলে ফেলুন।
–কান্তা কো বলো।দলজিৎ বললেন।
রত্নাকর বুঝতে পারে আম্মী একা পারবেন না।কান্তা কে পাঠিয়ে দিয়ে বলল,আম্মীকে দিয়ে এসে একটু রসুন তেল গরম করে দিও।
–জি সাব।কান্তা বড়ি মেমসাবের ঘরে গেল।
কান্তা ফিরে এসে তেল গরম করে।রতি ঘরে ঢূকে দেখল আম্মী লুঙ্গি পরে পা ঝুলিয়ে বসে কাতরাচ্ছেন।রতি নীচু হয়ে পা-টা ধরে বিছানায় তুলে দিয়ে বলল,পা ঝুলিয়ে বসবেন না।
এত যন্ত্রণার মধ্যেও দলজিতের মন জুড়িয়ে যায়।জিজ্ঞেস করেন,পুত্তর তুই আমাকে বহুৎ পেয়ার করিস?
–কেন করব না,আপনি আমার মা না?
দলজিৎ হেসে বললেন,জরুর পুত্তর।
কান্তা তেলের বাটি নিয়ে এল,রতি হাত থেকে তেলের বাটি নিয়ে পরীক্ষা করে উষ্ণতা।
কান্তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে সাহেবের কাজ।তেল হাত দিয়ে পরীক্ষা করে দলজিতের যে পায়ে যন্ত্রনা সেটা কোলে রেখে লুঙ্গি হাটু পর্যন্ত তুলে তেল নিয়ে মালাইচাকিতে  লাগিয়ে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করতে লাগল।প্রথমে একটু “আহা-উহু” করলেও ধীরে ধীরে দলজিতের বেশ আরাম হতে থাকে।
কালিম্পং-এ জীপ থামিয়ে অর্কিড হাউসে ঢূকল খুশবন্ত।পছন্দ মত টব সমেত একটা গাছ কিনে পয়সা দিতে গিয়ে গোলমাল।কিছুতেই পয়সা নেবে না,খুশবন্ত পয়সা ছাড়া গাছ নেবে না।মোহন ছেত্রী বোঝাতে শেষে বাধ্য হয়ে পয়সা নিল। বাংলোর কাছে আসতে খুশবন্তের মন খারাপ হয়।মোহন ছেত্রী বলল,স্যার পেপারঅলা বাতচিত করতে চায়।
বিরক্ত হয়ে খুশবন্ত বলল,সদানন্দকে কথা বলতে বলুন।
পিছন পিছন ওসি এসেছিল,খুশী হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে রোমাঞ্চকর অভিযান সম্পর্কে আলোচনা করতে থাকে।
সাংবাদিকদের উল্টোপাল্টা প্রশ্ন ভালো লাগে না।জিপ থেকে নেমে সিড়ি বেয়ে বাংলোয় ঢুকল।খুশবন্ত ঘরে ঢুকে দেখল যা ভেবেছিল তাই,বাড়ী ফাকা।নিজের ঘরে গিয়ে চেঞ্জ করল।
কান্তাও নেই নাকি?দুবার কান্তা কান্তা বলতেই দরজায় দেখা গেল চা নিয়ে দাঁড়িয়ে কান্তা।
কান্তার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে খুশবন্ত জিজ্ঞেস করল,ওরা কখন বেরিয়েছে?
–আজ বাইর হয় নাই।বড়ি মেমসাবের তবিয়ত আচ্ছা নেহি।
আম্মীর শরীর খারাপ?জিজ্ঞেস করল,সাহেব একা বেরিয়েছে?
–সাহেব দাওয়া দরু করছে।
–দাওয়া দরু?খুশবন্তের কপালে ভাজ জিজ্ঞেস করে, তুমি কি করছিলে?
–আমি দেখছিলাম।
খুশবন্ত সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ায়।রতি চিকিৎসা করছে?ও গড একী শুনছে?ঘর থেকে বেরিয়ে আম্মীর ঘরে গিয়ে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়।রতি পিছন ফিরে বসে, কোলের উপর আম্মীর পা,পাঁচ আঙুলে মালাইচাকি ধরে নাড়ছে। চোখাচুখি হতে মুচকি হাসলেন দলজিৎ।পায়জামা নেই লুঙ্গি পরেছে উরু অবধি লুঙ্গি তোলা।মাথা ঝিম ঝিম করে উঠল।একটু হলেই চা চলকে পড়ছিল।খুশবন্ত নিজের ঘরে ফিরে এল।কান্তাও ঘরে ছিল,খুশবন্ত চায়ে চুমুক দেয়।
একটু পরে রতি ঢুকে জিজ্ঞেস করল,মুন্নি কখন এলে?
–তোমার ডাক্তারী বিদ্যে জানা আছে জানতাম না তো?
–আম্মীর খুব কষ্ট হচ্ছিল তোমার হলে বুঝতে।
–এটা কি তোমার কাজ?
রতি থতমত খায় পরে বুঝতে পেরে বলল,তুমি দশ পৃষ্ঠা বলেছিলে দাড়াও দেখাচ্ছি।
রত্নাকর নিজের লেখার ঘরে গিয়ে কাগজপত্র গোছাতে থাকে।খুশবন্ত দেখল আম্মী দরজায় এসে দাড়িয়েছে, লুঙ্গি বদলে পায়জামা পরেছেন।
–কেমন আছো?
–আভি থোড়া আরাম মেহশুস হচ্ছে।
–তোমার বহুৎ নাফা হল?
–মতলব?
–বেটা পেলে ডাক্তার ভি পেলে?
দলজিৎ খিল খিল করে হেসে উঠল।হাসি থামতে বলল,তোর বাপু বলত দলজিতে বেটার জন্য আফশোস কোরোনা।মুন্নি তোমার বেটা আছে আউর লেড়কি ভি আছে।আভি সচমুচ হামার বেটা ভি মিলে গেল।
খুশবন্ত চোখ তুলে আম্মীর দিকে তাকিয়ে থাকে,চোখে মুখে কি তৃপ্তি।
দলজিত বললেন, যাই ঘরের মধ্যে একটূ হাটি।দলজিৎ চলে গেলেন।
হন্তদন্ত হয়ে রতি ঢুকলো,হাতে একরাশ কাগজ।খুশবন্তের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, দেখো নিজের চোখে দেখো।
খুশবন্ত কাগজগুলো নিয়ে চোখের সামনে মেলে ধরে।রত্নাকর বাধ্য ছাত্রের মত পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে।খুশবন্ত পড়তে থাকে তিস্তা নামে একটি মেয়ে কলেজ যাবার পথে কিছু বকাটে ছেলে বিরক্ত করত।বাড়ীতে দারিদ্র্য বাইরে উপদ্রব সব কিছু উপেক্ষা করে লেখাপড়া চালিয়ে যায়।মনে স্বপ্ন একদিন কোনো প্রশাসনিক পদে পৌছে—।খুশবন্ত চোখ তুলে রতিকে দেখে জিজ্ঞেস করল,তিস্তা কে?
–কে আবার একটা সাধারণ ঘরের মেয়ে।
খুশবন্ত কাগজগুলো ফিরিয়ে দিয়ে বলল,রেখে এখানে এসো।
কান্তা এসে বলল,মেমসাব আপনাকে অফিসে ডাকছে।
–আচ্ছা।তুমি সাহেব আর আমাকে টিফিন দিয়ে যাও।
খুশবন্ত লুঙ্গি পরেই অফিসে ঢুকলো।সদানন্দ স্যালুট করে বলল,আমি আসি স্যার?
–হাসপাতালে খোজ নিয়ে ফোন করে জানাবেন সেণ্ট্রি কেমন আছে?মোহন জী আপনি বিশ্রাম করুন।সকালে দেখা হবে।
রতি ঘরে ঢুকে দেখল টেবিলের উপর একটা গাছে সুন্দর ফুল ফুটেছে।নাক এগিয়ে নিয়ে সুন্দর গন্ধ পেল।খুসবন্ত দরজায় এসে দাড়িয়েছে।রতি জিজ্ঞেস করে,কি ফুল সুন্দর গন্ধ?
–একটা নাম বলেছিল মনে নেই।অর্কিড–পরগাছা।ফুল সুন্দর কিন্তু অন্য গাছে ভর করে বেচে থাকে।
রত্নাকরের মুখটা করুণ হয়ে উঠল,চোখদুটো ছলছল করে।খুশবন্ত অবাক হয়,কাছে এসে জড়িয়ে ধরে চুমুতে চুমুতে অস্থির করে তোলে।কাদছো কেন?
রত্নাকর হাসল চোখ মুছে বলল,আমিও একটা পরগাছা।
খুশবন্ত বুঝতে পেরে জড়িয়ে ধরে বলল,ইউ আর মাই পার্ট–আমার অংশ।তুমি-আমি কি আলাদা?ফুল ফোটাবার জন্য আমি জনম জনম তোমাকে ধরে রাখবো জান।
কান্তা ঢুকতেই রতিকে ছেড়ে দিল।কান্তা দুটো প্লেট নামিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
বিয়ের পর বঙ্কিম আর চায়ের দোকানে আসার সময় পায়না।ডাক্তারবাবুর চেম্বারেই বেশি সময় কাটে।মাঝে মধ্যে উমাদার সঙ্গে দেখা হয়।শুভ দার্জিলিং যাচ্ছে।দেবীকা আণ্টি মেয়ে জামাইকে ট্রেনে তুলে দিতে গেলেন।নম্বর মিলিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় বসিয়ে দিয়ে বললেন, সাবধানে যাবে।ট্রেনে মালপত্তরের দিকে নজর রাখবে।ও হ্যা কোট নিয়েছো তো? রোজি বলল,মামণি তুমি নামো,ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গেছে।
–হ্যা মা আপনি নেমে পড়ুন।শুভ বলল।
ট্রেন ছাড়তেই প্লাট ফরমে দাঁড়িয়ে দেবীকা আণ্টি হাত নাড়তে থাকেন।
রাগিনী বসে আছে তার নিজের অফিস চারতলায়।আম্মাজী তার খাস কামরায় ধ্যানে বসেছেন,কিছুক্ষন পরেই সাক্ষাৎপ্রার্থীরা আসবে।কৃষ্ণকলি চারতলায় উঠে এসেছে।রাগিনীকে জিজ্ঞেস করে,আচ্ছা আনন্দকে দেখছিনা উনি আসেন না?
রাগিনী সন্দিগ্ধ চোখ তুলে কৃষ্ণকলিকে দেখে জিজ্ঞেস করে,আপনি তো কলেজে আছেন?
–কে আমি?একটা অন্য কলেজের নাম বলল কৃষ্ণকলি।
–দেখুন সোসাইটি ঠীক করে দেবে কাকে কার সঙ্গে দেওয়া হবে।কারো পছন্দমত দেওয়া হয়না।
কৃষ্ণকলি হতাশ হয়।আগে বাস স্ট্যাণ্ডে আনন্দর সঙ্গে মাঝে মধ্যে দেখা হতো,বহুকাল দেখা হয়না।কলেজের সঙ্গে যুক্ত কিছু করতে গেলে অনেক ভেবেচিন্তে করতে হয়।পুজোর কটাদিন কীভাবে যে কেটেছে বলার মত নয়।আবার বিয়ে করবে কিনা চিন্তাটা মাথায় ঘুর ঘুর করে।কোথাও বেড়াতে যাবে ভেবেছিল কিন্তু একা একা ভাল লাগেনা।
উমানাথ ফিরতে উশ্রী খবরটা শুনে খুশী,টিকিটের ব্যবস্থা হয়ে গেছে,গোছগাছ শুরু করে দিয়েছে।মাঝে আর কটাদিন।দিদির জন্য ভাল কিছু একটা কিনে আনবে, নন্টূর জন্যও।বিয়ের আগে মা-বাবার সঙ্গে পুরী গেছিল।ভুবনেশ্বর কোনার্ক উদয়গিরি খণ্ড গিরি বাবা-মার সঙ্গে সঙ্গে। এবার একেবারে স্বাধীন তার ইচ্ছেতেই ঠিক হবে কবে কোথায় যাবে। এই সময়টাই ভালো পরে বাচ্চা-কাচ্চা হয়ে গেলে ঝামেলা। মনীষা বলল,শীতের পোশাক নিতে ভুলোনা।

চলবে —————————